ঝাড়গ্রাম নিউজ ফ্ল্যাশ ডেস্ক : সাহিত্য ও শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য রাজ্যের মধ্যে প্রথম সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সোরেন পাচ্ছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের যে পদ্ম পুরস্কারের তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে নাম রয়েছে ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা কালীপদ সোরেনের। সাঁওতালি সাহিত্য জগতে যিনি খেরওয়াল সোরেন নামেই অধিক পরিচিত। কালীপদের জন্ম ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর থানার অন্তর্গত বেলাটিকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর গ্রামে। বাবা প্রয়াত তারাচাঁদ সোরেন ছিলেন আমিন। মা প্রয়াত কাপুমনি সোরেন গৃহবধূ। তাঁরা দুই ভাই ও এক বোন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভের পর ১৯৭৮ সালে জামবনির সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর ১৯৮৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার সাথে সাথে তিনি ওই বছরের ৩০ এপ্রিল মাসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়ার কলকাতার উল্টোডাঙা শাখায় ক্যাশিয়ার কাম ক্লার্ক পদে যোগ দেন। ব্যাঙ্কে চাকরি করলেও তাঁর মন পড়েছিল সাঁওতালি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায়। সে জন্য তিনি ব্যাঙ্কের চাকরিতে প্রোমশন নেননি। কালীপদ সোরেন বললেন,‘আমার নাট্যদল ছিল। নাটক করতে গিয়ে অফিস যেতে পারিনি। যার ফলে আমার মাইনেও কাটা গিয়েছে। অনেক ম্যানেজার বলেছিলেন আপনি প্রোমশন নিন অনেক সুযোগ পাবেন। আমি উনাদের বলেছিলাম আমি যে মাইনে পাই তাতে আমার সংসার চলে যায়। কিন্তু আমাদের সাঁওতাল সমাজকে দেখার ক’জন আছে। তাই আমি প্রোমশন না নিয়ে কর্মজীবন সাহিত্য চর্চা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি।’ উল্টোডাঙা থেকে বদলি হয়ে তিনি চলে আসেন ঝাড়গ্রামের দহিজুড়িতে। তারপর সেখান থেকে ঝাড়গ্রাম শাখা এবং কর্মজীবনের অবসর নেন পুকুরিয়ার চাঁদাবিলা শাখা থেকে। ৬৪ বছরের কালীপদ সোরেন বর্তমানে থাকেন ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুর এলাকায়। বাড়িতে স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা। ছেলেমেয়েরা সকলেই পড়ুয়া। সাঁওতালি নাটক ‘চেৎ রে চিকা য়েনে’ অর্থাৎ ‘কিসে কি হল?’এর জন্য ২০০৭ সালে এবং দিব্যেন্দু পালিতের উপন্যাস ‘অনুভব’ অনুবাদের জন্য ২০১৯ সালে দিল্লি থেকে সাহিত্য এডাকেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও রাজ্য সরকারের কবি সারদা প্রসাদ কিস্কু স্মৃতি পুরস্কার ও সাধু রামচাঁদ মুর্মু স্মৃতি পুরস্কার ও আদিবাসী গুণীজন সংর্বধনা পেয়েছেন তিনি। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তাঁকে সংবর্ধনা জানান ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিয়কুমার পাণ্ডা, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অধ্যক্ষ দেবনারায়ন রায় এবং ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ মহিলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশীল বর্মন। পদ্মশ্রী নাম ঘোষণার পর কালীপদ সোরেন বলেন,‘সাঁওতালি সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে যে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছিলাম এতে তা পূর্ণতা পেল। আগামী দিনে আমাদের সাঁওতালি সমাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করব।’