
জেএনএফ ওয়েব ডেস্ক :-ফালাকাটা ব্লকের নবনগরে শিকদার বাড়ির পারিবারিক দুর্গাপুজোয় আজও অষ্টমীর রাতে রক্ষাকালীর পুজো হয়। দেশ ভাগের আগে বাংলাদেশের ঢাকা জেলার দামড়াই থানার বনসাই নদীর তীরে নৈহাটি গ্রামে শিকদার বাড়ির এই পারিবারিক পুজোর সূচনা হয়। দেশভাগের পর শিকদার বংশের লোকেরা চলে আসেন ফালাকাটার জটেশ্বর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই নবনগর গ্রামে।
ওপার বাংলা থেকে আসার সময় শিকদার পরিবার তাদের পারিবারিক দুর্গা প্রতিমার পুরনো কাঠামো ও পুজোয় ব্যবহৃত পিতলের ঢাল, তলোয়ার নিয়ে এসেছিল। প্রতিমার কাঠামোটি নষ্ট হয়ে গেলেও আজও রয়ে গিয়েছে পিতলের সেই ঢাল, তলোয়ার। পারিবারিক পুজোর বংশানুক্রমিক অনুশাসন মেনে আজও মায়ের প্রতিমার পাশে রাখা সেই ঢাল, তলোয়ারও পুজো হয়। শিকদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের পেশা কৃষিকাজ। এপার বাংলায় আসার পর নবনগরে জমি কিনে চাষবাস করেই প্রতিবছর মায়ের পুজো করেন তাঁরা। বৈষ্ণব মতে ও শাস্ত্রীয় আচার নিষ্ঠার কঠোর অনুশাসনের নিয়মেই শিকদার বাড়িতে পূজিতা হন দশভূজা। বংশের নিয়ম অনুসারে গাড়িতে নয়, চার-পাঁচ কিমি দূরে প্রতিমা তৈরির কারখানা থেকে শিকদার বাড়ির লোকেরা কাঁধে করেই বাড়িতে প্রতিমা নিয়ে আসেন। স্থানীয় মুজনাই নদীতে দশমীতে প্রতিমাও নিরঞ্জন দেওয়া হয় কাঁধে চাপিয়েই। প্রতিমা নিরঞ্জনেও যানবাহন ব্যবহার করা হয় না। বংশের ওই ধারা আজও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন শিকদার বাড়ির পরবর্তী পুরুষরা।পরিবারের অনুশাসন মেনে আজও আমাদের পারিবারিক দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর গভীর রাতে রক্ষাকালীর পুজো হয়। পারিবারিক পুজো হলেও তাতে শামিল হন গ্রামের লোকেরা। শিকদার বাড়ির এই পারিবারিক দুর্গাপুজোর ইতিহাস ধরে রেখেছে ওপার বাংলা থেকে আনা পুজোয় ব্যবহৃত পিতলের তৈরি সেই ঢাল, তলোয়ার। অত্যন্ত ভারী এই ঢাল, তলোয়ার একইসঙ্গে পুজো করা হয়।
পরিবারের রঞ্জিত সিকদার জানান, “পুরোনো নিয়ম ও নিষ্ঠা সহকারে পুজো করা হয় । আমাদের বাড়ির প্রতিমা প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দূর থেকে কাঁধে করে নিয়ে আসা হয় ,কাঁধে করেই দশমীতে বিসর্জনও দেওয়া হয় ।এলাকার প্রায় তিন চারশো লোক জন ওই প্রতিমা আনার দিন সামিল হন। রীতি মেনে অষ্টমীর গভীর রাতে রক্ষা কালীর পুজো করা হয়।” ওই পুজো যে বহু প্রাচীন তার নিদর্শন হিসাবে পুরোনো পিতলের ঢাল ও তরোয়াল পুজো মন্ডপে নিয়ম করে শোভিত হয় ইতিহাসকে সাক্ষী রাখতে।



